যে কারণে খাবারের ক্রেভিং হয়

প্রায় সময়ই আমাদের মনে হঠাৎ কোনো খাবার খাওয়ার ইচ্ছা জাগে। খাবার যে শুধু ক্ষুধা লাগলেই খায় বা খেতে ইচ্ছা হয়, তেমনটা হয়। অনেক সময় রসনা তৃপ্তির জন্যও বিভিন্ন মুখরোচক খাবার খাওয়া হয়। তবে হঠাৎ কোনো খাবার খাওয়ার ইচ্ছা এমনি এমনি নাও হতে পারে। শরীরের কোনো উপাদানের ঘাটতি হলে, সেই সংকেত দেয় আমাদের জিহ্বা।

লো ব্লাড সুগার থেকে মানসিক চাপ, এমনকি নারীদের পিরিয়ডের কারণেও ক্রেভিং অর্থাৎ, নির্দিষ্ট কোনো খাবার খাওয়ার বা পান করার ইচ্ছা জাগতে পারে। কোন খাবার খাওয়ার বাসনা কোন সমস্যার কারণে হতে পারে, জেনে নিন-

লো ব্লাড সুগার: শ্বেতসার সম্পন্ন খাবার যেমন রুটি, পাস্তা জাতীয় খাবার খাওয়ার ইচ্ছা জাগার মানে হলো, রক্তে গ্লুকোজ বা শর্করার ঘাটতি রয়েছে। দীর্ঘসময় শ্বেতসার খাওয়া না হলে এমনটা হতে পারে। হঠাৎ রক্তে গ্লুকোজ বা শর্করা কমে গেলে স্টার্চজাতীয় খাবার খেতে ইচ্ছা করে। সেক্ষেত্রে আস্ত বীজ ও শস্যজাতীয় খাবার গ্রহণ করা উচিত। শস্যজাতীয় খাবারে ফাইবার অর্থাৎ, তন্তুজাতীয় উপাদানের আধিক্য থাকে। এছাড়া এসব উপাদান হজম হতেও সময় লাগে, তাই অনেকক্ষণ পেট ভরা থাকে। শস্যজাতীয় খাবার অনেক প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান ভরপুর।
মানসিক চাপ: গবেষকদের মতে, যখন মানুষ মানসিক চাপে থাকে, তখন কর্টিসোল নামক হরমোন নিঃসৃত হয়। এর ফলে মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়ার ইচ্ছা তীব্র হয়। এরকম হলে চিনি বা মিষ্টি খাওয়া উচিত নয়। কারণ তাতে হঠাৎ রক্তে চিনির পরিমাণ বেড়ে যায় আবার ভেঙেও যায়। এরফলে মেজাজ খারাপ হওয়া এবং ক্লান্ত বোধ হতে পারে। তাই মিষ্টি খাওয়ার চাহিদা মেটাতে ফল, দই বা ঠান্ডা দই খেতে পারেন। ফল বা দই একটি চমৎকার নাস্তা। দইয়ে প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকে যা হাড়ের জন্য ভালো। অন্যদিকে, বেরি বা ফলে রোগ প্রতিরোধী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে।

তৃপ্তির অভাব: গরম, সুস্বাদু কোনো পেট ভরিয়ে কিছু খেতে ইচ্ছে করলে মিষি্ট আলু বা মসুর ডাল খাবারে রাখতে পারেন। মসুর ডালে প্রোটিন, ফাইবার থাকায় রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিক রাখে এবং বার বার ক্ষুধা লাগার সমস্যা কমিয়ে আনে। মিষি্ট আলুও ফাইবার আর ভিটামিন ‘এ’-এর ভালো উৎস। তাই এই খাবার গুলো অনেকক্ষণ পেট ভরা রেখে তৃপ্তি আনে।

এর বিকল্প হতে পারে উচ্চ আমিষ বা প্রোটিন জাতীয় খাবার। ক্ষুধা মেটাতে আর তৃপ্তি প্রদানে ডিম, মাছ, মুরগীর মাংসও ভালো কাজ করে।

পিরিয়ড সাইকেল: নারীদের ক্ষেত্রে, মানসিক চাপে থাকলে মিষ্টিজাতীয় খাবার খেতে ইচ্ছে করে। বিশেষ করে চকলেট খাবার খেতে ইচ্ছা হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি হয়। গবেষণাতেও দেখা গেছে নারীদের পিরিয়ড চলাকলে সাধারণত চকলেট, মিষ্টি, নোনতা খাবার ইচ্ছা বেশি হয়। সেক্ষেত্রে চকলেট বা বাদাম বা নারকেল দুধ খাওয়া যেতে পারে। চিনিবিহীন বা কম চিনিযুক্ত চকলেট দুধও পান করা যেতে পারে। বাদাম আর বীজ খেলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি পূরণ হয়।

পিপাসা: অনেকের ক্ষেত্রে শুধু খাবার খাওয়ার আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে পানীয় পানের ইচ্ছাও জাগতে দেখা যায়। মস্তিষ্কের একটি নির্দিষ্ট অংশ ক্ষুধা-তেষ্টা নিয়ন্ত্রণ করে। তাই অনেক সময় পর্যাপ্ত পানি পান না করার কারণে খাবারের সাথে সাথে পানীয় পানের ইচ্ছাও জাগে। তাই যদি কখনো ক্ষুধা বোধ হয় কিন্তু কি খাবেন ভেবে পান না, তখন এক গ্লাস পানি পান করুন। পানি পানের পর ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে দেখুন সমস্যার সমাধান হয় কিনা।

মানুষের শরীরে সোডিয়ামঘাটতি সহ বিভিন্ন কারণে খাওয়ার পর তৃপ্তি বোধ না করার সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিভিন্ন উপাদানের অভাবজনিত কারণে মানুষ ভিন্ন ভিন্ন খাবার খাওয়ার আকাঙ্ক্ষা তৈরি হতে পারে।ফল, দই, ডিম এবং বীজ ও শস্য খাবার এধরনের আকাঙ্ক্ষা মেটাতে সাহায্য করতে পারে। তবে বেশি গুরুতর পরিস্থিতিতে চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

Your Ads

Ready to take your business to the next level?

Share it :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Your Ads

Ready to take your business to the next level?