শীতের রাতে আল্লাহর অনুগ্রহের সন্ধানে যা করতে পারেন

রাতের নিস্তব্ধতা যখন জগতের সবাইকে ঘন ঘুমে ডুবিয়ে রাখে, তখনই পুণ্যবান ব্যক্তিরা ঘুম থেকে উঠে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হন। সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত এই তাহাজ্জুদ নামাজের সওয়াব অর্জনের সুযোগ থাকে। যদি রাতের শেষ প্রহরে জাগার সম্ভাবনা কম থাকে, তাহলে এশার নামাজের পর এবং বিতরের আগে তাহাজ্জুদ পড়া যেতে পারে। তবে রাতের শেষ প্রহরের তাহাজ্জুদে অধিক সওয়াব রয়েছে। হাদিস শরিফে শীতকালকে ইবাদতের বসন্তকাল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

সাহাবি আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘শীতকাল মুমিনের বসন্তকাল।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস, ১১৬৫৬)।

শীতের নিস্তব্ধ রাতে মুমিনদের জন্য আল্লাহর দরবারে নিজেকে নিবেদন করার এক অনন্য সুযোগ। এই সময় আদায় করা তাহাজ্জুদ নামাজ মুমিনের ইমানকে দৃঢ় করে, আল্লাহর সাথে তার সম্পর্ককে আরো ঘনিষ্ঠ করে এবং দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের কারণ হয়। কোরআন ও হাদিসে তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলতের বর্ণনা অসংখ্য।

হজরত ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলতেন, ‘শীতকালকে স্বাগতম। কেননা তা বরকত বয়ে আনে। শীতের রাত দীর্ঘ হয়, যা কিয়ামুল লাইলের (রাতের নামাজ) সহায়ক এবং দিন ছোট হওয়ায় রোজা রাখতে সহজ।’ (শুয়াবুল ইমান, বাইহাকি, ৩৯৪০)।

আল্লাহ তায়ালাও পবিত্র কোরআনে রাতের ইবাদতের কথা বলেছেন। বর্ণিত হয়েছে, ‘রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ পড়বে, যা তোমার জন্য এক অতিরিক্ত ইবাদত। আশা করা যায় তোমার প্রতিপালক তোমাকে ‘মাকামে মাহমুদে’ পৌঁছাবেন।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত, ৭৯)।

অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তারা ধৈর্যধারণকারী, সত্যবাদী, নির্দেশ পালনকারী, সৎপথে ব্যয়কারী এবং শেষ রাতে ক্ষমা প্রার্থনাকারী।’ (সুরা আল ইমরান, আয়াত, ১৭)

রাতের ইবাদত সম্পর্কে হজরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকাকালে পৃথিবীর নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে ঘোষণা করতে থাকেন; কে আছে এমন, যে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দেব। কে আছে এমন, যে আমার নিকট চাইবে? আমি তাকে তা দেব। কে আছে এমন, যে আমার নিকট ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করব।’ (বুখারি, হাদিস, ১১৪৫)

তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত শুধু দুনিয়ার কল্যাণ নয়, বরং আখিরাতেও অসীম প্রতিদান বয়ে আনে। আল্লাহর নৈকট্য লাভ, আত্মশুদ্ধি, এবং ইমানের দৃঢ়তার জন্য শীতের দীর্ঘ রাতের এই বিশেষ ইবাদত মুমিনের জীবনে অত্যন্ত মূল্যবান। তাহাজ্জুদ নামাজ কেবল ইবাদতের একটি অংশ নয়; এটি আল্লাহর প্রতি বান্দার ভালোবাসা, আনুগত্য, এবং পরম নির্ভরতার প্রকাশ।

Your Ads

Ready to take your business to the next level?

Share it :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Your Ads

Ready to take your business to the next level?